সেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে টা
❤❤❤❤❤❤❤
গতকাল সন্ধ্যা থেকেই WhatsApp, massenger, Instagram সব জায়গায় ব্লক করে রেখেছে শ্রেষ্ঠা।
নিখিলও যেচে ফোন করেনি আর।
ওদের প্রেম টা কলেজ জীবন থেকেই। বড়ো বড়ো কাজল কালো চোখ আর প্রানবন্ত চঞ্চল মেয়েটার প্রেমে পড়েছিল প্রথম গম্ভীর, শান্ত মেজাজের ক্লাস টপার নিখিল রায়। যদিও এটা প্রথম নয় যে ওরা একে অপরকে ব্লক করেছে, ঝগড়া করেছে।
ওদের সম্পর্কের শুরুই হয়েছিল বড়ো বড়ো ঝগড়া ঝামেলা দিয়ে। বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা পাঁচ টা বছর কাটিয়েছে একসাথে হাতে হাত রেখে। ঝগড়া যেমন করেছে ততোটাই ভালোবেসেছে ।
যতটা কেঁদেছে ততোটাই হাসিয়েছে একে অপরকে। এই পাঁচ বছরে অনেক টুকরো টুকরো মিষ্টি স্মৃতি জমিয়েছে ওরা । কিন্তু এবারের ইগোর ওজন অনেকটাই বেশি, দুই তরফেই চাপা গুমোট পরিবেশ যেনো। তাই দুজনেই দুজনের বিশ্বাসে বদ্ধমূল।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্র বার, অর্থাৎ দুই দিন আগে।
শ্রেষ্ঠা একটা NGO তে কাজ করে। যথারীতি তাকে অনেক সময়ই এদিক ওদিক যেতে হয়।
সেদিন একটা ফোন আসে কলকাতা থেকে একটু দূরে একটা গ্রামে, পঁচিশ বছর বয়সী এক গৃহবধূকে তার নেশাগ্রস্ত স্বামী পিটিয়ে খুন করার চেষ্টা করছে। উন্মত্তের মত তাকে আক্রমণ করছে। বধুটি কোনক্রমে লুকিয়ে ফোন করে শ্রেষ্ঠাদের অফিসে।
তৎক্ষণাৎ শ্রেষ্ঠা আর তার টিম রওনা দেয় গন্তব্যে।
কলকাতার বুকে নারী নির্যাতন,মেয়েদের জোর করে বিবাহ দেওয়া আটকানো , ধর্ষণমুক্ত সমাজের জন্য হেল্পলাইন ব্যাবস্থা এবং বহু মেয়েদের উদ্ধার করে তাদের স্বনির্ভর প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা এটাই তাদের কাজ, তাই স্বভাবতই ডাক পেয়ে সকলে মিলে ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। শ্রেষ্ঠার সেদিন ছিল খুব জর। সে ভুলে গেলো সে সকালে একজনকে কথা দিয়ে এসেছে যে সে আজ আউটডোর কাজ করবেনা, সেই সাথে তাড়াহুড়োতে ফোনটাও ফেলে চলে যায় নিজের ডেস্ক এ।
সেখানে পৌছতে তাদের পুরো এক ঘন্টা লাগে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে অভিযুক্ত স্বামী তার স্ত্রী কে রাস্তায় বের করে নির্যাতন করছে,মহিলাটির মাথা দিয়ে চাপ চাপ রক্ত নিঃসৃত হচ্ছে। বাইরে লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে দেখছে,কিন্তু কেউ কাছে যাচ্ছেনা। একটি চার পাঁচ বছরের বাচ্চা অঝোরে কাঁদছে,তার কোলে আর একটি ছয় সাত মাসের বাচ্ছা, সেও ভয় সিঁটিয়ে রয়েছে। অনুমান করা যায় তারা ওই দম্পতিরই সন্তান। উদ্ধারকারী দল তৎক্ষণাৎ ছুটে যায় এবং ওই মহিলাকে উদ্ধার করে। এরপর থানা পুলিশ হাসপাতাল এবং এক ঘন্টা রাস্তা পেরিয়ে তাদের ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে যায়।
অন্যদিকে সকাল দশটা থেকে একটা ফোন ক্রমাগত বেজে বেজে থেমে গেছে কখন কেউ জানতেও পারেনি। সকল কর্মচারীদের মাঝে একজনের ঘাম ঝরেছে এই February মাসেও , তবু অফিস থেকে সহজে বেরোনোর উপায় নেই। ওদিকে NGO তখন প্রায় ফাঁকা, তাই অফিসের ফোন টাও কেউ তোলেনি। এই পরিস্থিতি কতটা অসহায় তা হয়তো একজন আপনজনই বুঝতে সক্ষম।
রাত দশটায় ক্লান্ত দেহে যখন শ্রেষ্ঠা ফেরে তখন সে টের পায় শরীরে কতটা চাপ পড়েছে, এসেই ধপ
করে বসে পরে নিজের ডেস্কের সামনের চেয়ারে।হঠাৎ বিদ্যুৎ খেলে যায় মাথায়। তৎক্ষণাৎ সে ডেস্ক থেকে ফোন টা বার করে চেক করে দেখে ছিয়ানব্বইটা মিস কল। সে মনে মনে ঠাওর করতে পারে সে ঘটনার ঘনঘটা ।
কারণ এতটা দেরী এই প্রথম সে অভিজ্ঞতা করলো, আর সেই সাথে তার অসুস্থতা, না জানিয়ে যাওয়া এবং ফোন না নিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে আজ বাবা মার সাথে সাথে জবাব দিহি করতে হবে নিখিলকেও।
শ্রেষ্ঠা আগে মা কে ফোন
করে জানায় সে ঠিক আছে ও ফিরছে এবং সাথে সাথেই ফোন টা কেটে নিখিলকে ফোন করে।
ফোন করেই বলে
- সরি… আমাকে একটা কাজে চলে যে…
- বাড়ি যা তুই।
বলেই ফোন টা কেটে দেয় নিখিল।
শ্রেষ্ঠার বন্ধু বান্ধব ,শ্রেষ্ঠার বাড়িতে ফোন করে কোনো খবর না পেয়ে, এবং নিজের পুলিশ বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করেও কোনো খোঁজ না পেয়ে শেষে শ্রেষ্ঠা ফোন করার কিছুক্ষণ আগেই নিখিল শ্রেষ্ঠা দের অফিসে আবার ফোন করে। অবশেষে তখন অফিসের দারোয়ান ফোনটা তুলে জানায় ওরা রেসকিউ করতে গেছে।
সেদিন রাতে কোনো কথা বলেনি নিখিল। পরদিন এই নিয়ে তুমুল বিবাদ চলে। একজন দায়িত্বজ্ঞান হীনতার তকমা পায় তো অন্যজন বলে ‘ তুই আমাকে একটুও বুঝিস না ‘ ।
একজন বলে ” সরি তো আমি বলেছি “
তো অন্যজন বলে ” হ্যা তাহলে তো সাত খুন মাফ।”
এই ভাবে পারদ চড়ে বহুক্ষণ। তারপর সেই ঝগড়ার বিষয়বস্তুর বিস্তার ঘটে বহু দূরের অতীত পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত ” ঠিক আছে আমি যখন এত খারাপ আমার সাথে আর কথাও বলতে হবেনা” বলে ফোন টা রেখে দেয় শ্রেষ্ঠা। রাখার সময় কানে আসে ” ঠিক আছে, আমি যখন তোকে বুঝিনা , সব দোষ যখন আমার আমিও ফোন কো….”
তারপরই ব্লক হয়ে যায় ঠিকানা গুলো।
আজ সকাল থেকেই মেঘ জমেছে রবিবারের অলস দুই আকাশে। স্যোশাল মিডিয়ায় চারিদিক ভরে উঠেছে অসংখ্য হ্যাশ ট্যাগ। প্রেমের এটাই হলো একটা বড়ো রোগ। শিশু যেমন যতই দুষ্টুমি করুক না কেনো, মায়ের আঁচল ধরে টানলে মায়ের মন যেমন গলতে শুরু করে, সেরকমই চারিদিয়ে প্রেম ভালোবাসা দেখলে স্মৃতির পাতায় টান পরে, আর হিমবাহ থেকে বরফ গলতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে রাজার ঠিকানা আনব্লক হয়ে যায়, আর রানীর ফোনে ফোন আসে চেনা রিংটোনে।
রানী শুরু করে,
- খেয়েছিস?
- হুম, তুই ?
- হ্যা। রাগ করে আছিস এখনও?
- ছার এসব কথা আজ।
- ঠিক আছে, কিন্তু এরকম ভুল আর হবেনা, ফোন টা আমি সাথে রাখবো সবসময়।
- হুম।
- ও হ্যা, যদিও দিনটা শেষের দিকে, তবুও Happy Valentine’s Day.
- Happy Valentine’s Day. Love you…
ফোনের দুই প্রান্তে দুটি মুখে মুচকি হাঁসি ফুটে ওঠে।
কিছু কিছু ভ্যালেন্টাইন্স ডে এরকমও হয়। এই ভাবেই বেঁচে থাক এই রাজা রানীরা এবং তাদের গল্পগুলো।
© রূপকথা
valentinesday
lovestory